সাম্প্রতিক কয়েকটি কবিতা
******** ******* ******
ঘুমন্ত শহর তুমি ডেকো না আমায়
----------
এ শহর এই লোকালয়
জাগবে না কোনদিন, কেন প্রতিক্ষায়
বেলা চলে যায়?
আধুনিক ব্যথাগুলো শান্তি...
অশান্তির নয়
কেননা সইতে হয় নিয়ত নিয়মে।
মিথ্যার বেসাতি করে ঘুমিয়ে পড়েছে
আমাদের পাঠশালা। ঋজু।
চেতনা হরন করে দানবিরা খেলা করে গহিন কোটরে
সময় ফুরিয়ে যায়, সেও চলে যায়
তুমি তো এসব জ্ঞান কাতরতা বলে এরাবেই।
গৃহিনির বৃক্ষশোভা পুকুরের পাড়
নদিপাশে বনঝোপ পথের কিনার
গাছালির মায়াঘেরা সোনালি সূর্যাস্ত
সবই ডেকে নেয়।
দারিদ্রতা এক ভয়ানক প্রেক্ষাগৃহ
যাপিত সময় তুমি কাকে করো আপনার ডেকে?
যে যেমন জ্ঞান নিয়ে পৃথিবিতে আসে
সে তেমন চলে যায়। দারুন মজার।
মনেও রাখে না কেউ ঝরাপাতা, পাতার জীবনী।
ব্যথাশূন্য প্রান তবু ব্যথার মনিষা
তুমি তাতে শান্তিতে ঘুমাও।
-----------
২৪ জুলাই ২০২২, রবিবার, হোটেল উত্তরা
বেনিমাধব প্লাজা, আরামবাগ, নেত্রকোনা।
---------
সেতু শুধু দাঁড়াবার নয়
---------
যে দিন গিয়েছে চলে, তাকে
মনে করো শত অবসরে
হয়ত কিছুই নাই তবু রেখো সুখের স্বপনে
পাবে ক্লান্তি, জড়া, সেই সুখ নবিনের।
যেটুকু লজ্জার গ্লানি কাকে দিবে তুমি
রেখে দিয়ে তাও তো আনন্দ, নিজেতেই।
ব্যথা পেয়ে কালো হয়ে মনে রাখ বেদনার নাম
একটি নির্বাক প্রান গাছ
চারা থেকে জল ঢেলে বড় করে বহুদূর গেলে
ভাবো তুমি, কি চাইতে পারো তার কাছে?
বিষন্ন দিবসে খুব কাছে ডাকা ছাড়া!
যখন কিছুই নাই শত জনে দেখাটুকু দিয়ে
আনন্দিত ভিতর বাহির
দিন শেষে দেখ, ফাঁকা জিবনের সেতু
ডাকে গৃহ, আয়, পাবে তাও একা হও
খুব করে নিজেকে ভাবাও
জিবনের সেতু শুধু দাঁড়াবার নয়।
১৬ মে ২০২২, সোমবার, কাটোলি (উত্তর), নেত্রকোনা।
----------
বৈভবের দিন
-----
মায়া কেটে যাবে, শেষে তুমিও ঘুমাবে
এই দেশ মরু মৃত্তিকার উদৃতি তো নয়
তবু চেতনায় রুগ্ন থাকা আমাদের
ঘুমের স্বভাব, খুচা দিয়ে যাবে কেউ
শৈত্যতার জবুথবু ভেঙে ফের তাকাবে অদেখা
বিস্ময়ের দিন যেন মায়া ধরে আছে ৷
দূরদেশে বাড়ে না মায়ার সঞ্জিবন
অবিশ্বাসে ধুকছে তোমার হিনমন
আদিম তামাশা করে করে
হয়ে গেছ ঘৃন্যতার সুযোগ সন্ধানি
বিগতই করে যাচ্ছো বৈভবের দিন৷
হরিনার চোখে মায়া, কেউ করে কি চন্ডির পাঠ?
হয়তবা চেতনায় নেই কোন কড়া
সভ্যতার চলে গেছে কোটি কোটি দিন৷
তবু জেনো, চেতনার এই...
সংস্কৃতি ভাঙার সেতু পার হয়ে কেউ
দাঁড়াবে আলোয়, সঞ্জিবনে
গন্তব্যের বেসাতিতে আমাদের বিভ্রম হবে না৷
২৭ জানুয়ারি ২০২২, বৃহঃবার
কাটোলি (উত্তর), নেত্রকোনা৷
--------
আকাঙ্ক্ষা
--------------
আকাঙ্ক্ষায় যতগুলি টান পড়ে, ঠিক
ততগুলি ছিদ্র হয়ে যায়
তুমি টান দিচ্ছ আকাঙ্ক্ষায়
অতিতের সূত্রে৷
ভাবোনি সেসব দিন নবাগত
এতদিন যা বলেছি মৃত, পাতায় পাতায়
তুমি টান দিচ্ছ আকাঙ্ক্ষায়
অতিতের সূত্রে৷
কিন্তু আমি দেখি--
অতিত, আগত, চলমান
যা কিছু ভেবেছি, তার কোন মানে নেই
ঠুনকো কাঁচের মত সময়ের চোখ
সব মিথ্যা করে ফেলে দিয়ে যায় নিকট ভবিষ্যে ৷
তুমি টান দিচ্ছ আকাঙ্ক্ষায়
অতিতের সূত্রে, কিন্তু দেখ--
আমাদের অতিতের চোখগুলি নস্ট হয়ে যায়৷
---------
মানুষের মুখ
----------
ভোরের সূর্যের মতো তাকিয়ে দেখেছি আমি প্রতিটি মানুষ
মানুষের মুখ! ভাবাবেগ, কোমলতা
সকলেই একেকটি সকরুন নিঃসংশয় চিত্ত
প্রান আছে কিন্তু সত্তাহিন
নিষ্করুন কোন এক মোহময়ি জড়িয়ে রেখেছে
নিদারুন ঘুমের চাদরে।
সবুজ ধানের শিষে জড়িয়ে শিশির
হলুদ সর্ষের রঙে কোমল মাঠের জড়াজড়ি
লাউয়ের মাচায় নুয়ে লকলকে ডগার আদর
কৃষ্ণচূড়া আর তার রঙে রাঙা নিরবতা, শহিদ মিনার
নদিটির মোহনায় প্রিয়দের কোলাহল নগর মানুষে।
সকলের ভিড়ে একা, একাকি জিবনে
প্রতিদিন ভোরকে জাগিয়ে দাও তুমি
ঘুমে থাকা গ্রামিন আলোয়।
প্রিয়জন আসে যায় কত
স্যোসাল মিডিয়া করে তার দরদাম
বেলা শেষে প্রতিটি মানুষ
মানুষের মুখ আজ একা সকরুন, সত্তাহিন!
---------
অতীত
--------
অতীত হিসাব তুমি কেন ভুলে যাও?
তোমার যে অনাগত দিন
তাকে ভাবো,
কেন সেও পুষে আনে বেদনার রঙ!
প্রতিবার ফলের আহার শেষে
তোমার জিহ্বায়...
যেরকম থেকে যায় স্মৃতি
তেমনই যতনে রেখো তারে
হোক না সে যত পুরাতন!
একদিন ঠিকঠাক জেনে যাবে তার
গভীর রহস্য, গূঢ় সফলতা
তোমার নিকটে বেজে ওঠা ধ্বনি
নির্মানের কলা।
অতীত অমৃত ফল, আয়নার চিত্রঘর
তার মুখোমুখি দাঁড়ালেই
দেখবে তোমার সব ভূত-ভবিষ্যত।
------------
নিরন্তর ধাবমান চিতা
---------
ভিতরে যে জ্বলে, বলেছ তা আগুন
যখন আমার মনে এমন দাহন
টের পাই সে তো এক চিতা
নিরন্তর নিবিড় দাহন।
একেকটি নতুন দিনের বার্তা পাই
জ্বলে চিতা...
সাম্য, ন্যায়, শান্তি
উড়ে কত শাদা কবুতর!
জ্বলে চিতা...
নিরন্তর ধাবমান চিতা।
দিন, মাস, বছর চলেছে
এক গিয়ে আরেক এসেছে
ছোট মেয়ে তুমি, হাঁটি হাঁটি পা পা করে
ঠাকুমা হয়েছ
আমি আছি ওখানেই, আগের মতোই
চিতাটি জ্বলছে, নিরন্তর ধাবমান।
এ দহন কখনো থামে না
শুধু জ্বলে, অনিবার্য ভিতরে আমার
কালাকাল পার হয়ে দাঁড়িয়েই আছি
শহিদ ঝান্টুর চিতায়
চিতাটি জ্বলছে, নিরন্তর ধাবমান।
---------
পথের ঘটনা
--------
মৃত্যুর পরেও যদি জৈবনিক হয়ে
আমাকে হাঁটতে দেখ কিংবা
হাসিখুশি কোন সমাবেশে অন্তর্লিন
অথবা ধরেই নাও, ঠিক হলো কিছু?
জিবনের নাম শুধু ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া
যেতে যেতে ছোট হতে হতে
একবার অনুভূত হলো এক সমাধি প্রবর
পুনরায় মনে হলো তুমি আছো কাছেই কোথাও
সকালের শিশির যেমন ঘাসে ঘাসে
যেরকম থাকা হলে বলা যায় থেকেও তো নাই।
একই পথে একই দিকে দু'দুবার হয় যদি দেখা
কিছু না হলেও ভাবি ক্ষনিকের ঘটা।
রুপালি স্বপ্নে তো থাকে ভাঙন কেবল
শতাব্দি পেরিয়ে যায়, হায়! জিবনের চক্রবাক
মনে করো, ওটা এক পথের ঘটনা।
--------
নিড়ানি ও চিরুনি
---------
লোকটি নিড়ানি দিচ্ছে ক্ষেতে
কিন্তু ক্ষেতে কোন ফসল নেই
এক সময় ক্ষেতে চারাগাছ ছিল
তখন সে নিড়ানি দিতো না।
একুশ বছর বয়সে সে জানতো
চিরুনি দিয়ে মাথার চুল আচরানো যায়
এখন সে চিরুনি ব্যবহার করে
কিন্তু তার মাথায় কোন চুল নেই।
--------
বৃস্টি
------
বৃস্টিতে নিজেকে দেখে আমি তো হতাশ!
আগে এক ধারনায় বৃস্টিকে ডাকিনি কখনো
কারন সে চঞ্চলা ময়ূরি
বৃস্টিতে পেখম যদি মেলে
এক ঝটকায় ভেজাবেই
শিশিরের আমেজ শরিরে নিয়ে
অসময়ে মাঠে ময়দানে বন লতাদের কথা
ভেবে ভেবে যতসব আকুলতা হবে
তোমার কি ভালো লাগবে তা?
তার চেয়ে চলো আজ অঝোর বৃস্টিতে
পাশাপাশি থাকি দুজনেই
বৃস্টিই প্রানের সব, দেখ—
ব্যথার এমন স্বচ্ছ প্রকাশনা আর
কোথায় না খোঁজ...
প্রয়োজনে একটু কাঁদতে চাও বলে।
প্রকৃতির কান্না বৃস্টি, সকলে দেখে না
এটা একটি ধারনামাত্র, নিয়মের
সমুদ্র যা বুকে নিয়ে বিশাল হয়েছে
আকাশ তা দুঃখতেই ফিরিয়ে দিয়েছে চিরকাল।
বৃস্টির অপর নাম দুঃখ
দুঃখ ছাড়া দিগন্তের সবুজ, কোথায় মিলে বলো?
দেখতে চাইলে সাথে নিয়ে যেও আমাকে
সমুদ্রে, পাহাড়ে কিংবা আকাশের নিলিমায়
প্রতিটি ফোঁটার নাম দেব দুঃখ, দুজনে।
--------
অন্য অর্থগুলি
--------
ছকবন্দি জিবনের চোখে ভরা সাঝের আকাশ
গ্রিলের লোহায় ঝরে টুপটাপ অন্য অর্থগুলি।
অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে...
কেউ বলে না বেদনা নয়
সুদিন আসলে দেখো মনে পড়ে যাবে
জরাগ্রস্ত চিন্তা, শিত লেগে ঘুম ভাঙে বারবার
অক্ষরের ছাপচিত্রে বাধা পড়ে যায়
ভুলে ভরা বিগত দিনের কান্নাচিহ্ন।
একথা জানবে সত্য, যতবার তুমি
আকাশ দেখেছ, কান্নাচিহ্নে কিংবা কোন
সুখের স্বপনে...
ততোধিক প্রিয় আর কোন কিছু নয়।
----------
জন্মান্তর
---------
মহানের এই ভালোবাসা ধরে আছি কতকাল
প্রতিক্ষায়! প্রতিক্ষা একটি সঞ্জিবন
সেভাবেই গূঢ়তায় জাগিয়ে রেখেছে।
অমোঘের মহাতিথি, মেলে যদি দেখা
হয়তোবা কিছু নাই গতজন্মে ছিল কিছু আঁকা।
গতজন্মে ডেকেছিল কেউ!
তুমিই তোমার ছিলে কিনা!
এ বিধান লিপিবদ্ধ কর কেন!
সিমাবদ্ধ ছিলে কিনা সিমিত সময়ে।
এইসব বৃক্ষছায়া, শত রাঙাফুল
আকাশের তারাগুলি, শিতল অন্বেষা, ঘুরে দেখা নদিকূল
এমনকি অজানা ঘুমেও গেল সব জন্মান্তরে
কেবল তুমিই ফিরলে না।
----------
আমি আর বকুলের দিনলিপি
----------
বকুল, তোমার ঝরে পড়া ইতিহাসে
দেখেছি আমার নাম, ঝাপসা, মলিন—
এ খবর লিপিবদ্ধ আছে
খড়কুটো, ঝরে পড়া পাতা সম্প্রদায়ে
তোমরা যা, দুপায়ে মাড়িয়ে যাও দূর বহুদূর।
এ জিবন নির্জন কুটুরি এক, সান্ধ্যবাতিহিন
খুদকুটো শেষ হলে পাখিও থাকে না
অদৃশ্যের মায়া ঘুমে পড়ে টান, গৃহে ফিরে যায়।
তোমরা তো উৎসবের আনন্দে মুখর
নির্জন আড়াল করে বহুদূর গেলে
কে রাখে ওসব মনে? পেছনের পরিযায়ি খাতা
উড়ে উড়ে পড়ে যাওয়া পাখির পালক
এগুলোর আবেদন নিতান্তই মূল্যহিন আজ
পৃথিবিতে, তোমার চোখের মায়া বাড়ে
বারবার ডেকে নেয় বকুল তলায়।
তোমরা তো যেতেই পারো, যাও, আমি আছি
আর আছে ঝরে পড়া খাতা, বকুলের দিনলিপি।
---------
ডানার সিম্ফনি
--------
আমার ডানা থেকে খসে পড়া চিলগুলি
চিত্রসরূপের, উড়াউড়ি, আকাশের গৃহায়নে—
থাবার নকশা দেখি প্রান্তিক ছায়ায়।
নুব্জ, কাতর, মনের মাঝে শুধু তার
নর্দমার কিটের বল্কল
পাশ ফেলে চলে যাওয়া শুভর পদাংক
পৃথিবির সোনালি অতিত থেকে ডেকে আনে ভয়।
সৃজনের লিপিচিত্রে সভ্যতার চিলগুলি নেই
তুমি দেখো থাবার নকশা...
ভুবনের চিলেদের উড়াউড়ি
বাতাসে, আছড়ে পড়া গায়ে
যেরকম বেজে ওঠে ডানার সিম্ফনি।
কচ্ছপের লেজ ধরে এগিয়ে চলেছে
বয়সের বলিরেখা, তার ভাঁজে ভাঁজে—
চোরা পৃথিবিও এগিয়েছে বহুদূর।
তারো বহুদূরে...
নুপূরের নাচ আর সুরেলা সংগিতে
মত্ততায় আকরে ধরেছে কোমলতা কুমারিরা
ঘুমের গভিরে তুমি কিছুই দেখ না।
----------
অমলিন মুখখানি দেখে
---------
নিজেকে যায় না দেখা।
যতবার খুব করে দেখলাম নিজে
নিজেকে আয়নায়
এ কথাই মনে হলো বারবার।
আমি, সেতো সেই আমি আছি
যেরকম ছিলাম শৈশবে
কৈশোর, যৌবন পার হয়ে আজ
পূর্নতা পেলাম।
ফলে তুমি যত কাছে আসো
কিংবা দূরে যাও
বড় হও, ছোট হও
যা চাও তোমার মনে হতে পারো তুমি।
আমি ভাবি, বন্ধু তুমি চিরদিন—
অমলিন মুখখানি দেখে দেখে
ভব্যতার কতগুলি দিন কাটালাম।
----------
ভুল
-----
সব ভুল কাঁদায় একদিন
তুমি চাও বা না চাও
নেই তার কিছুই পরোয়া
ভুল থেকে দূরে কেউ নয়
যতই দূরত্ব তুমি করো না রচনা
নিকট আত্মিয় হয়ে ঘুরবেই চারপাশ৷
ভুলের পাঠশালায় কোন
সমাপ্তি থাকে না৷
ভুল করে একদিন কেঁদেকেটে দেখো
মনে হবে কান্না করা কিছুতেই ঠিক হলো না৷
ভুল করে ভুলে যাবে কেন?
সব ভুল কাঁদায় একদিন
তুমি চাও বা না চাও
নেই তার কিছুই পরোয়া৷
১১ জুন ২০২১, শুক্রবার
কাটলি (উত্তর), নেত্রকোনা৷